চারিদিকে শুধু গুলিয়াখালি সি বিচের মহিমা শুনতে শুনতে মনে হলো গুলিয়াখালি সি বিচটাই দেখে আসি। কম খরচে ঢাকা থেকে এক দিনের ট্যুরে এরচেয়ে ইউনিক জায়গা আর হয় না। তাই হুট করে দুপুর বেলা এই চিন্তা মাথায় আসার পর বিকেল বেলাই টিকেট কেটে রাত ১১ঃ৩০ টায় বাসে উঠে পড়লাম। বৃহস্পতিবার হওয়া সত্ত্বেও ঢাকার বুকে এক ফোটা জ্যামও না পেয়ে ভয়ই পেয়ে গেলাম সামনে না জানি কি আছে। মিরপুর থেকে সায়েদাবাদ পৌঁছে গেলাম ১ ঘন্টার মধ্যে। হাইওয়েতে গিয়ে আশঙ্কাই সত্যি হল। উথাল পাথাল জ্যাম। গাড়ি ৫ মিনিট আগায় আর ১ ঘণ্টা করে বসে ধাকে। কুমিল্লা পৌছতে পৌছতে সকাল ৭ঃ০০ টা!!!!! অথচ আশা ছিল সিতাকুন্ড গিয়ে সূর্যোদয় দেখবো! যাই হোক সিতাকুন্ড নামলাম ঠিক সকাল ৯ টায়। কুমিল্লার পর গাড়ি যেন প্লেনের মত উড়ে গেল বাকি টুকু পথ! যাই হোক সিতাকুন্ড বাজারে হালকা নাস্তা করে সিএনজি ভাড়া করে গেলাম গুলিয়াখালি সি বিচ। সিএনজি ১০০-১৫০র নিচে যাবেই না! অথচ আমরা মানুষ মাত্র ২ জন! কপালগুনে এক সিএনজিআলাকে পেলাম যে অলরেডি ২ জন স্থানিয় লোককে নিয়ে ঐদিকেই যাচ্ছে।
৮০ টাকায় আমাদের সাথে নিতে রাজি হল। বিচে যেতে যেতেই শুরু হল চরম বৃষ্টি! আর বিচে পৌছতে পৌঁছতে বৃষ্টি শেষ! কিন্তু যা হওয়ার হয়ে গেছে। সিনএনজি থেকে নামার পরে দেখি সি বিচ পর্যন্ত যেতে ২-৩শ গজ রাস্তা কাদার সাগর! হাটু পর্যন্ত প্যান্ট গুটিয়ে খালি পায়ে যাওয়া ছাড়া উপায় নাই! কাদার ওপারেই সেই বিখ্যাত বিচ দেখা যাচ্ছে। মনের ভেতরে আকুপাকু করছে! তাই সেইভাবেই হাঁটা। মাঝপথে দেখি একটা বাঁশের ছোট্র সেতু। তার পাশে কয়েকজন লোক দাড়িয়ে ১০ টাকা করে চাঁদা তুলছে! হাটু পর্যন্ত কাদা দেখিয়েও কোন লাভ হল না। টাকা দিতেই হল! যাই হোক বিচে গিয়ে মনে হল সব কষ্ট সার্থক। এরকম দৃশ্য শুধু বাংলাদেশ না, পৃথিবীর আর কোথাও আছে কিনা সন্দেহ (বাসায় এসে গুগল করে অনেক খুজেছি। পাই নাই)। মনে হচ্ছিল অন্য কোন গ্রহের কোন বিচে এসে পড়েছি সেখানে সবই সবুজ!!!! আরেকটা জিনিস চোখে পড়ল লাখ লাখ কাঁকড়া আর তাদের কোটি কোটি গর্ত! প্রতি ইঞ্চিতে কাঁকড়ার গর্ত! অবশ্য ভয়ের কিছু নেই। এগুলো খুব ছোট ছোট আর মানুষ দেখলেই গর্তে ঢুকে যায়! আর দেখলাম গরু। স্থানিয় লোকজনের গরু। ফ্রিস্টাইলে ঘুরে বেড়াচ্ছে আর ঘাস খাচ্ছে। এত সুন্দর ঘাস আর কোথাও পাওয়া সম্ভব না। তাই এরা সবাই বেশ নাদুশ নুদুশ। বিচের দুই পাশেই ঘন জঙ্গল। স্থানিয় লোকজন বলল ওখানে হরিণ আছে। তবে মানুষের ভয়ে দিনের বেলায় বাইরে আসে না। বিচ থেকে পেছন দিকে তাকালেই চন্দ্রনাথ পাহাড় দেখা যায়। সেও এক অসাধারন দৃশ্য। কয়েক ঘণ্টা বিচে থেকে ফিরে এলাম। পায়ের কাদা ধোয়া আর গোসলের জন্য পেলাম একটা পরিষ্কার পানির পুকুর, বিচ সংলগ্ন গ্রামের মধ্যেই। যেখানে সিএনজি থেকে নেমেছিলাম ফেরার পথে তার বাম পাশেই। সেই সিএনজি স্ট্যান্ডেই আবার খাবার হোটেল আছে ২-৩ টা। গোসল করে খেতে বসলাম। আমরা যেটায় বসেছি তাতে মেনু ২ টাই- চিকেন খিচুরি উইথ ডিম আর ভাত উইথ ইলিশ মাছের তরকারী। খাবার খুব অসাধারন না হলেও দামের তুলনায়, পরিমাণে আর এতক্ষন ঘোরাঘুরির পর খেয়ে পেট ভরে গেল। ৭০ টাকার খিচুরি একজনে খেয়ে শেষ করা কষ্ট! আর ইলিশ আর ভাত ৮০ টাকা। ফেরার পথে সিএনজিআলাদের ডাকাতির থেকে আর বাঁচতে পারলাম না। ১৫০ টাকার এক টাকা কমে আসবে না। শেষ পর্যন্ত ২ জনে তাই দিয়েই আসলাম। সিতাকুন্ড থেকে ঢাকার বাস ধরলাম বিকেল ৪ টায়। ফেরার পথে তেমন জ্যাম ছিল না। মিরপুর পৌছে গেছি ১১ টার মধ্যে।
সতর্কতাঃ বিচে যাওয়ার পথে একটা সাপ দেখেছি। সাপ দেখলে ঘাবড়ানোর কিছু নাই। সাপের একেবারে কাছে গিয়ে হঠাৎ সাপ আবিস্কার করলে দাঁড়িয়ে থাকবেন যতক্ষন না চলে যায় আর একটু দূরে থাকতেই দেখলে পিছিয়ে এসে অন্য দিকে দিয়ে ঘুরে যাবেন। সাপ দেখে আপনি ভয় পাবেন না। আপনার কোন মুভমেন্ট দেখে সাপ যাতে ভয় না পায় সেটাই মাথায় রাখবেন সবসময়!
আর বিচে অল্প কয়েকটা ছোট ছোট দোকান গজিয়েছে। যেখানে চিপস, পানি আর ডাব পাওয়া যায়। যাই খান দয়া করে বিচে ফেলে আসবেন না। বিচ থেকে ফিরে যেখানে হোটেল আছে সেখানে ময়লা ফেলার ঝুড়ির মধ্যে ফেলবেন।